top of page

করোনা-পরবর্তী জীবনধারা - নিউ নরমাল

সুপর্ণা ঘোষ

এই মুহূর্তে আমরা যে জীবনযাত্রায় নিজেদের মানিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি, তার পোশাকি নাম হলো "নিউ নরমাল"। এই পর্বে এবং আগামী পর্বগুলিতে আমি এই 'নিউ নরমাল' কে মাথায় রেখে সকলের ভালো থাকার এবং একই সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

এখন প্রশ্ন হলো, এই নিউ নরমাল বা নতুন স্বাভাবিকত্বটা ঠিক কি রকম ? আসুন, সেটাই খানিকটা বোঝার চেষ্টা করি-

যদিও আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনের দিকে এগোচ্ছি ইদানিং, কিন্তু তাতে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবেই এবং আমাদের 'স্বাভাবিক' জীবনযাত্রারও লক্ষণীয় গঠনগত পরিবর্তন ঘটবে।

আগামীতে এমন দিন আসতে চলেছে যেখানে আপাতদৃষ্টিতে অস্বাভাবিক এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিই হয়ে উঠবে "স্বাভাবিক জীবনযাত্রা"। 

NewNormal.jpg

উদাহরণ স্বরূপ, বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করা- যাকে আমরা বলি ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অস্থায়ী বেকারত্ব, প্রিয়জন, পরিচিত ও সহকর্মীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ না হওয়া, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাড়ি বসে স্কুলের ক্লাস করা ইত্যাদি ইত্যাদি অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এমন একটি অভূতপূর্ব জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে হচ্ছে যেখানে রয়েছে করোনা সংক্রমনের ভীতি - তা সে নিজেদেরই হোক বা নিজের প্রিয়জনের। এই ধরনের ঘটনা কম-বেশি প্রত্যেকেরই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।

এমতাবস্থায়, মানসিক অবস্থাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে আমাদের কি কি করা উচিত সেটাই আজকের আলোচ্য বিষয় -

আমাদের নিজেদের এবং একই সাথে আমাদের আশেপাশের মানুষদের ( বিশেষত যারা মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন এবং যাদের আরেকটু বেশি যত্ন ও মানসিক সহযোগিতা প্রয়োজন) মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা বজায় রাখতে কি কি করণীয়, আসুন জেনে নেওয়া যাক :

 

  • যা কিছু হারিয়েছেন, তার জন্যে দুঃখ হলে সেটা প্রকাশ করুন - সবার অলক্ষ্যে বা প্রকাশ্যে। অনুভূতিগুলোকে চেপে রাখবেন না। জোর করে নিজেকে ওই মুহূর্তে দৃঢ় প্রমান না করে বরং অনুভুতিগুলোকে বয়ে যেতে দিন। আর সেটা হলেই আপনি খুব সহজেই এই নতুন জীবনযাত্রার অভ্যাসগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন।

  • এই নতুন জীবনযাত্রার নিয়মগুলো মাঝে মাঝে খুবই কষ্টকর মনে হতে পারে তাই জীবনের ছোট-বড় আনন্দ, যেগুলো আপনার বা আপনার প্রিয়জনের মুখে একচিলতে হাসি ফোটাতে পারে, যেমন ধরুন সকালের এক কাপ গরম চা কিংবা একটা নতুন কোনো রান্না করা অথবা আপনার বাড়ির ছোট্ট সদস্যটির সাথে একটু সময় কাটানো বা খেলা করা - সেইসব মুহূর্তগুলিকে উদযাপন করুন। একটু সৃজনশীল আর গঠনমূলক চিন্তা করুন আর এই ছোট ছোট খুশিগুলোর মধ্যে জীবনের আনন্দটা খুঁজে নিন।

  • বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ-দুনিয়ার হল-হকিকত সম্পর্কে অবগত থাকা খুবই জরুরি। তবে সারাদিন খবর সংক্রান্ত বিষয়ে মনোযোগী থাকাটা মানসিক অবস্থার জন্য খুবই অস্বাস্থ্যকর। তাই যেসব খবরে মানসিক উত্তেজনা বেড়ে যায়, সেইসব খবর এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

  • পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-পরিজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন যাতে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের মন ভালো থাকে।

  • যেহেতু প্রতিনিয়ত ভয়, অনিশ্চয়তা, উৎকণ্ঠা, একঘেয়েমির সাথে লড়াই করতে হচ্ছে, তাই অ্যালকোহল, ড্রাগ এসব থেকে দূরে থাকুন। অভ‍্যস্ত না থাকলে নতুন করে পানীয়ের অভ্যেস না করাই ভালো।

  • একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমগুলি ( সোশ্যাল মিডিয়া) ব্যবহার করুন। সদর্থক চিন্তাভাবনা বা গল্প শেয়ার করুন, ভুল বা ভুয়ো তথ্য চোখে পড়ল শুধরে দিন, আর্তের সাহায্য করুন আর্থিক বা মানসিক ভাবে, এবং সর্বোপরি, একজন ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন।

 

মনে রাখবেন, আপনি নিজেই আপনার এবং আপনার প্রিয়জনের আনন্দের উৎস হয়ে উঠতে পারেন।

bottom of page