top of page

ডিপ্রেশন এবং COVID 19

সুপর্ণা ঘোষ

কোরোনা ভাইরাস বা Covid-19 আজ সারা বিশ্ব জুড়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে, আর সেই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের এক নতুন সংকট ক্রমশই মাথাচাড়া দিচ্ছে। এই নতুন সংকট হয়তো আরও বেশি ভয়াবহ এবং কোরোনা ভাইরাসঘটিত মারণ ব্যাধির চেয়েও বেশি হতাশাজনক হয়ে উঠতে পারে। সমস্যাটির নাম ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ।

শারীরিক সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে New Normal এবং বিশেষ করে এই কোয়ারান্টিনের প্রভাব অনেক মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যকলাপ এবং জীবনযাত্রায় নিয়ে আসতে পারে একাকীত্ব, অবসাদ। এর পাশাপাশি আ্যলকোহল, ড্রাগ জাতীয় নেশাদ্রব্যের ব্যবহার, নিজের ক্ষতির চেষ্টা বা আত্মহত্যার মত ঘটনার মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে পারে।

এখন প্রশ্ন হল, কিভাবে বুঝবেন যে একজন মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগছেন?

আমরা অনেক ক্ষেত্রেই কোনো কোনো সময় বিষণ্ন বা হতাশ হয়ে পড়ি। বিষন্নতা এবং ডিপ্রেশনের মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। বিষন্নতা মানেই সবক্ষেত্রে তা ডিপ্রেশন বা অবসাদ নয়। একজন অবসাদগ্রস্ত মানুষের মধ্যে সারাক্ষণ একটা উদ্যমের অভাব এবং হতাশা দানা বাঁধতে থাকে। সেই ক্ষেত্রে কাজকর্ম, পড়াশুনো, খাওয়া, ঘুম, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, আনন্দ উপভোগ এসবই ব্যাহত হতে থাকে ।

Depression_And_Covid19_BLANK.jpg

দিনের বেশিরভাগ সময়ের বিশেষতঃ সকালের ভাগের বিষাদগ্রস্ত মেজাজ এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম বা সম্পর্কের প্রতি অনিচ্ছা, উদ্যমের অভাব - এই ধরণের উপসর্গগুলি দিনের পর দিন কারোর মধ্যে যদি প্রায় দু'সপ্তাহ টানা লক্ষ‍্য করা যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই মানুষটি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের শিকার।

 

এছাড়াও, কারো কারো ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদ গভীরতর হলে অনেক সময় আরও বেশ কিছু উপসর্গও দেখা যেতে পারে। যেমন-

 

  • ক্লান্তি বা সারাদিনে সবসময় নিরুৎসাহিত থাকা

  • প্রতিদিন প্রায় নিজেকে মূল্যহীন ভাবা কিংবা প্রতি মুহুর্তে অপরাধবোধে ভোগা

  • একাগ্রতার অভাব, দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতা

  • দিনের পর দিন নিদ্রাহীনতা বা অতিনিদ্রা

  • মানসিক অস্থিরতা অথবা আলসেমি

  • প্রতিনিয়ত মৃত্যু বা আত্মহত্যার কথা ভাবা

  • লক্ষণীয় আকস্মিক ওজনবৃদ্ধি বা ঘাটতি

 

বর্তমানে, এই কোভিড প্যানডেমিকের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকা মানুষের মধ্যে যা যা লক্ষণ দেখা যেতে পারে, সেগুলি হলো :

  • নিয়মিত ওষুধপত্র সহজলভ্য নয় অনেক ক্ষেত্রেই

  • কোভিড-১৯ এবং অনবরত এর সংক্রমণের ভয় ও নিজের কাছের মানুষদের সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা

  • নিম্নমুখী আর্থিক অবস্থার কারণে অতিরিক্ত উৎকন্ঠা

  • সামাজিক দূরত্বের কারণে আরও বেশি একাকীত্বে ভোগা

  • ভবিষ্যত নিয়ে অত্যন্ত হতাশা ও অসহায়তা অনুভব করা

একজন আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের কিভাবে যত্ন নেবেন

 

  • যে কোনো ধারালো বস্তু, অস্ত্র, প্রাণঘাতী ওষুধ বা সম্ভাব্য ক্ষতিকর জিনিস গুলিকে সরিয়ে রাখুন

  • কোনো রকম জাজমেন্ট না করে ধৈর্য ধরে মানুষটির কথা শুনুন ও তাকে বোঝার চেষ্টা করুন

  • যত দ্রুত সম্ভব একজন প্রফেশনালের সাহায্য নিন

  • সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটি করতে হবে… "তুমি কি আত্মহত্যা নিয়ে ভাবছ?"

 

একজন ডিপ্রেশনে থাকা মানুষের কি ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন?

 

ডিপ্রেশন মানসিক স্বাস্থ্যের একটি গম্ভীর অবস্থা, তবে ওষুধ এবং কাউন্সেলিং দ্বারা এর সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব। যদিও এই লকডাউনে একজন সাইকো থেরাপিস্টের কাছে পৌঁছনো অনেকটাই কঠিন, সেক্ষেত্রে অনলাইন সেশনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সুষ্ঠু জীবনযাত্রা, যেমন খাওয়াদাওয়া ও শরীরচর্চাও ডিপ্রেশনের লক্ষণ গুলিকে দমাতে সাহায্য করে।

 

আপনার ভালোবাসার মানুষটির পাশে থাকা এবং তাকে উৎসাহ দেওয়া তাকে সুস্থ হয়ে উঠতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। উপদেশ দেওয়ার চেয়ে একজন ধৈর্যশীল ও যত্নশীল শ্রোতা হওয়া এক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । ডিপ্রেশনে থাকা মানুষটিকে তাদের অনুভূতি গুলো নিয়ে বলতে উৎসাহিত করুন এবং কোনোভাবে তাকে বিচার না করে তার কথাগুলো শুনে তাকে বোঝার চেষ্টা করুন।

bottom of page